নিজস্ব প্রতিবেদক :: উঁচু নিচু আর পাহাড় টিলার শহর হিসেবে সিলেটের আলাদা পরিচিতি দেশজুড়ে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে আগের মতো আর পাহাড় টিলা নেই। এক শ্রেণির অসাধু চক্রের কারণে নিঃশেষ হতে চলেছে পৃথিবীর খুঁটি হিসেবে পরিচিত পাহাড় আর টিলাগুলো। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কতগুলো টিলা রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই নগরভবনে। নানা কৌশলে অবাধে টিলা নিধনের কারণে হারিয়ে যাওয়া টিলার সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না।
গত বছর সিলেট সিটি করপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ড থেকে বর্ধিত হয়ে ৪২টি ওয়ার্ডে উন্নীত হয়। নগর বর্ধিত হওয়ার কারণে নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোর ভূমির দাম বেড়েছে। আর এ কারণে সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিলাকাটাও বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও সিলেটে বৃষ্টিপাত মাঝে মাঝে হওয়াটাকেই সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন টিলাখেকোরা। তারা রাতের আঁধারে টিলায় শাবল দিয়ে খুচিয়ে রাখে। একটু বৃষ্টি হলেই পানির সাথে নেমে আসে টিলার মাটি। এতে করে ড্রেন উপচে রাস্তার ওপরে জমে মাটির রূপ। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে যেমন বিঘœ ঘটে, তেমনি বাড়ে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও।
সরেজমিনে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়. এক সময় যেখানে সুউচ্চ টিলা ছিলো সেখানটায় আবাসিক ভবন কিংবা প্লট গড়ে ওঠেছে। সিলেট নগরী ও আশপাশের এলাকার মধ্যে সবচেে বেশি টিলাকাটা হচ্ছে নতুন অন্তর্ভূক্ত হওয়া সিটি করপোরেশন এলাকায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টুকেরবাজারের পীরসাহেবের টিলা, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিতু দেবনাথ এর বাড়ির পুর্ব পাশের টিলা, আখালিয়া বড়গুলের ওসমান মিয়ার বাড়ির পুর্ব পাশের টিলা, বড়গুলের দেবোত্তর সম্পত্তিতে থাকা রাবার বাগান টিলা। দুস্কি বাজারের দক্ষিণ পুর্ব পাশের টিলা, মোহাম্মদি আবাসিক এলাকার টিলা, উপরপাড়া হেলাল সার্ভেয়ারে বাড়ির পশ্চিম পাশের টিলা, নালিয়া মাদ্রাসা টিলা, বাটা বাবু লালের টিলা, হাওলাদার পাড়ার মজুমদার টিলা, যুগীপাড়া ফার্মের টিলা, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দলইপাড়া, বালুচর জোনাকী এলাকার বিভিন্ন টিলানহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে টিলাকাটা চলছে। পরিবেশ কর্মীরা বার বার আন্দোলন করেও ঠেকাতে পারছেন না টিলা ধ্বংসের কাজ। সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে সুফল পাচ্ছেন না- এমন অভিযোগ তাদের। এমনটি সিলেট নগরীতে টিলার সংখ্যা কত তাও জানে না খোদ সিলেট সিটি করপোরেশন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় টিলার গুরুত্ব অপরিসীম। অসাধু লোকেরা টিলা কাটছে বিভিন্ন কৌশলে। তারা বর্ষা মৌসুমে টিলা শাবল দিয়ে খুড়ে রাখে। বৃষ্টির পানির সাথে টিলার মাটি রাস্তায় নেমে আসে। আমরা এমনও পেয়েছি, পিচ ঢালাই রাস্তা বৃষ্টির পানির সাথে নেমে আসা মাটির কারণে ২/৩ ফুট নিচে নেমে গেছে। আমরা নিজস্ব যন্ত্রপাতি দিয়ে এ সকল টিলার মাটি অপসারণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে সিসিকের এই কর্মকর্তা বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কতটি টিলা রয়েছে, তার কোনো তালিকা নেই। তবে এবার এ তালিকা করা হবে যাতে করে কোনো অবস্থায় আর টিলাকাটা না হয়।
পরিবেশ অধিপদপ্তর, সিলেটের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, টিলাকাটার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টিলাকাটার অভিযোগে গত একবছরে অনেক মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় টিলাকাটা বন্ধ করা না গেলে প্রকৃতির বৈরিতা আরো বাড়তে পারে। কোনো অবস্থায় টিলাকাটা বরদাস্ত করা হবে না।
Leave a Reply